সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বা এসইও-র বিভিন্ন টুলস বা প্লাগিনস (ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের জন্য) আছে। সব টুলসেই ওয়েবসাইট চেক করে রিপোর্ট পাওয়ার একটা অপশন থাকে। এই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে যে কোনো ওয়েবসাইটের সমস্যাগুলো সমাধান করা হয়। এছাড়াও কন্টেন্ট বা আর্টিকেল লেখার ক্ষেত্রে এসইও টুলসগুলো অনেক সুবিধা দিয়ে থাকে। সাইবার দুনিয়ায় বা মার্কেটপ্লেসে প্রচুর এসইও টুলস আছে। কিছু সম্পূর্ণ ফ্রি আবার কিছু কিনে নিতে হয় মাসিক বা বাৎসরিক হিসেবে। অনলাইন বাজারে আমাদের দেশ বেশ এগিয়ে আর ফ্রিল্যান্সিং এ দিন দিন জনবল বেড়েই চলেছে। ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া অনেকেরই স্বপ্ন, আর সে লক্ষ্যে এসইও রিপোর্ট বোঝা এবং সমাধান করা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তো, আপামর জনসাধারণ আর নতুনদের কথা মাথায় রেখে ফ্রিতে কিভাবে এসইও টুলস নিয়ে কাজ করা যায়, সেটা এখানে দেখানো হবে।
বিভিন্ন এসইও টুলস (ফ্রি অথবা পেইড)
বিভিন্ন এসইও টুলসের কথা আমরা প্রায়ই অনলাইনে বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজারদের কাছে শুনে থাকি। সর্বাধিক জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে Ahrefs আর SEMRush। এই দুই এসইও টুল থেকে আমাদের দেশের বহু ওয়েবসাইট গুগলের টপ পেজে র্যাংক পেয়েছে। র্যাংকিং ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে আমরা সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি Alexa কে। আলেক্সার র্যাংকিং মানেই হলো বৈশ্বিক র্যাংকিং। গুগল এবং বিং সার্চ ইঞ্জিনে Alexa র্যাংকের ভিত্তিতেই যে কোন ওয়েবসাইটকে বিশ্লেষণ করা হয়।
তবে Ahrefs আর SEMRush উভয়েই পেইড টুলস। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে এই দুই নামকরা প্রতিষ্ঠান তাদের ক্রয়মূল্য কমিয়েছে এবং সাথে সুবিধাদিও বাড়িয়েছে। পাশাপাশি তারা ফ্রি বা trial version ও দিয়ে থাকে। যদিও ট্রায়াল ভার্সনে সুযোগ-সুবিধা কম পাওয়া যায়, তারপরও নতুন সাইটের জন্য বা web2.0 সাইটের জন্য বেশ কার্যকরী। দেখা যাক, উভয় এসইও টুলসের ইউজার ইন্টারফেস বা welcome screen টি কেমন-
এই হলো সেমরাশের (বা এস.ই.এম রাশ) ইউজার ইন্টারফেস। বামপাশের মেনু থেকে আপনার সাইটের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে পারবেন। এখানে কিওয়ার্ডের সবকিছু থেকে শুরু করে ব্যাকলিংক এনালাইসিস, অডিট, বাল্ক এনালাইসিস, লিংক বিল্ডিং করতে পারবেন। অন-পেজ এসইও আর লোকাল এসইও নিমিষেই করতে পারবেন Semrush এ। তবে আমাদের আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে Semrush একটু costly আর যে কেউই এটা নিতে পারবে না। কারণ, Pro প্যাকেজ মূল্য ১২০ ডলার যা ১০,২০০ টাকার মত, এবং প্রতি মাসে এটা গুনতে হবে। অবশ্য বিভিন্ন গ্রুপ টুলস সাইট থেকে মাসে ২৫০-৬০০ টাকার মধ্যেও এই প্যাকেজ পাবেন। সে সম্পর্কে পরে অন্য এক লেখায় জানানো হবে।
Ahrefs
Ahrefs আমাদের এই উপমহাদেশে বেশ জনপ্রিয়। এর প্রধান কারণ হলো, এটি বেশ সস্তা আর কাজ করতেও সহজ। যে কেউই এর কার্যাবলী বা অডিট রিপোর্ট সহজেই বুঝতে পারে। সেমরাশের মত আহরেফস (Ahrefs) এর ইউজার ইন্টারফেসে Tools নামে একটি মেনু আছে যা ড্রপ ডাউন মেথডে কাজ করে থাকে।
সম্পূর্ণ রিপোর্ট পেতে গেলে All Issues এ ক্লিক করতে হবে, তাহলে নিচের মত window আসবে-
Seobility
এবার দেখা যাক, আরো কি কি টুলস বা প্লাগিন্স আছে যা আমাদের এসইও-র ক্ষেত্রে উপকারে আসে। এক্ষেত্রে সর্বাধিক জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে Seobility কারণ এদের মোবাইল অ্যাপস আছে যা এন্ড্রয়েড মোবাইলে সহজেই install করা যায়-ফ্রিতেই। আসুন দেখা যাক, seobility দিয়ে Itoolsreview এর রিপোর্ট কিভাবে চেক করতে হয়।
গোলাপি তীর চিহ্নিত বক্সগুলো পূরণ করে চেকবক্সে টিক মার্ক দিয়ে নিচের সবুজ সাইন-আপ বাটনে ক্লিক করলে আপনার ই-মেইলে একটা কনফার্মেশন মেইল যাবে। সেখানে আপনার একাউন্টের ভেরিফিকেশন সম্পর্কিত কোড এবং লিংক দেয়া হবে যাতে এক্টিভেট/ক্লিক করে আপনি আপনার একাউন্টে প্রবেশ করতে পারবেন। অথবা আপনার যদি ফেসবুক বা গুগল প্লাস অথবা লিংকডইন একাউন্ট থেকে থাকে, সেখান থেকেও সহজেই এখানে একাউন্ট করতে পারবেন (ডানে সবুজ তীর চিহ্নিত)। পরের ধাপে আপনাকে একাউন্ট ড্যাশবোর্ডে রিডিরেক্ট করা হবে আর নিচের মত window আসবে-
এখানে আপনাকে প্রথমেই প্রজেক্ট Add করতে হবে। প্রজেক্ট মানে হলো আপনার সাইট এড্রেস বা লিংক। নিচের ছবিটি দেখুন-
সাইট url এবং টাইটেল (অপশনাল) লিখে ছবির মত করে রেডিও বাটনগুলোতে ক্লিক করে নিচে Add project and start crawling বাটনে ক্লিক করতে পারেন। অবশ্য এডভান্স কিছু সুযোগ-সুবিধা পেতে Show advance settings ড্রপ ডাউন থেকে option সিলেক্ট করতে পারেন। যদিও এডভান্সের অনেক কিছুই paid ভার্সনের জন্য। আমি অবশ্য বেসিক/ফ্রি ভার্সন দিয়েই দেখাচ্ছি এখানে-
ওভারঅল অন-পেজ স্কোর ৭২% যা ১০০% থেকে ২৮% কম। সাধারণতঃ ৮০% বা তার উপরের সাইট, র্যাংকিং এর জন্য যথেষ্ট। ডানপাশের Project Checklist এ খেয়াল করুন। সেখানে দুইটি Major issue আছে। সাইটে জাভাস্ক্রিপ্ট আর সিএসএস ফাইল বা কোড বেশি আছে অথবা রিপিট হয়ে গেছে বেশ কয়েক জায়গায়। উপরে Backlinks বাটনে ক্লিক করলে সাইটে কতটি ব্যাকলিংক করা আছে আর কোন কোন সাইট থেকে এসেছে, তা দেখা যায়-
পাশাপাশি এগুলো Follow না No-follow ব্যাকলিংক, তাও দেখা যায়। সেটা ইমেজে করা হয়েছে না টেক্সট হিসেবে দেয়া আছে- সে ইনফরমেশনও পাবেন। Seobility premium ভার্সনে আরো বিস্তারিত ব্যাকলিংক প্রফাইল জানা যায়। অবশ্য সাধারণ ব্যবহারের জন্য Seobility বেশ ভালো কাজ করে। তবে এতে কন্টেন্ট বা কিওয়ার্ড সম্পর্কিত অনেক তথ্য বেশি একটা পাওয়া যায় না।
Ubersuggest
ইদানিংকালে বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় Seo Guru হিসেবে পরিচিত Neil Patel তার কোম্পানি থেকে নতুন একটি এসইও টুলস তৈরি করেন। এটি বহুল পরিচিত Ubersuggest বা উবারসাজেস্ট। আমেরিকাভিত্তিক নামকরা প্রতিষ্ঠান উবার-এর Executive Director (additional) ছিলেন নেইল প্যাটেল। ভারতীয় ব্লাড-লাইনের আমেরিকান এই নাগরিক এক সময়ে গুগলেও বেশ ভাল পজিশনে চাকরি করতেন। উবারসাজেস্ট ছিল নেইলের Dream project আর অসীম ধৈর্য ও সাহসিকতার সাথেই তিনি এটি চালু করে ফেলেন। উবারসাজেস্ট মূলত গুগল ট্রেন্ডস, গুগল কিওয়ার্ড প্ল্যানার, সেমরাশ, আহরেফ, আর আলেক্সা এর কম্বিনেশনে তৈরি করা একটা টুল। এখানে ফ্রি আর পেইড, উভয়ভাবেই একাউন্ট খোলা যায় আর কিওয়ার্ড রিসার্চের জন্য বেশ পারফেক্ট। ইন্টারফেসটি দেখুন একবার-
চাইলে সাইন-আপ করতে পারবেন ফ্রিতেই। আর যদি সাইন-আপ করতে না চান, তাও সমস্যা নেই। কারণ, উবারসাজেস্ট প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিনবার কিওয়ার্ড রিসার্চ করার অপশন রেখেছে। কিওয়ার্ড বক্সে আপনার কাঙ্ক্ষিত কিওয়ার্ড লিখে পাশে ল্যাংগুয়েজ/কান্ট্রি সিলেক্ট করে সার্চ ক্লিক করলেই চলে আসবে এমন স্ক্রিন-
আরো ডিটেইলস জানার জন্য একই window তে নিচের দিকে স্ক্রল করলে আরো ইনফরমেশন পাবেন। এছাড়াও বামপাশের মেনুগুলো থেকে ড্রপ-ডাউন করে আরো অনেক কিছুই পাবেন যা আপনার অন-পেজ এবং অফ-পেজ এসইওর জন্য দরকারী।
কিওয়ার্ড সিলেকশনের সময় ডিফিকাল্টি আর ভল্যুম একটি বড় ব্যাপার যা আগেও আমার একটি আর্টিকেলে দেখানো হয়েছে। উবারসাজেস্টে এই বিষয়টি বেশ সুন্দরভাবে উপস্থাপণ করা হয়। এখানে যেমন দেখা যাচ্ছে যে, কিওয়ার্ড আইডিয়াতে একটি লো ভল্যুম আর easy ডিফিকাল্টি সহ একটি Title পাওয়া গেছে। পেইড ভার্সনে এরকম অনেক টাইটেল আর টপিক পাবেন আর সেখান থেকে সহজেই কন্টেন্ট লিখতে পারবেন বা তৈরি করতে পারবেন ইউটিউব ভিডিও।
Google Search Console (GSC)
সবশেষে আলোচনা করবো আমাদের সবচেয়ে প্রিয় আর সবসময়ের জন্য ফ্রি Google Search Console (GSC) টুল সম্পর্কে। গুগল সার্চ কনসোল থেকেই বাকি আর সব পেইড বা ফ্রি টুলসের সূচনা হয়েছে। প্রায় সব কিওয়ার্ড এবং এসইও টুল, এই গুগল সার্চ কনসোলের উপর ভিত্তি করেই রিপোর্ট দিয়ে থাকে।
গুগল সার্চ কনসোলে কিভাবে একাউন্ট খুলবেন সে সম্পর্কে ইউটিউবে বিস্তারিত বলা আছে এবং কিভাবে সাইট Add করতে হয় বা প্রোপার্টি set করতে হয়, সে সম্পর্কেও অনেক আর্টিকেল বা ভিডিও কন্টেন্ট আছে। সার্চ করে সেগুলো দেখে নিবেন। আপনার একাউন্টে লগ-ইন থাকা অবস্থায় গুগলে সার্চ করুন google search console login এবং এন্টার প্রেস করুন। নিচের মত window আসবে-
বামপাশে উপরে ক্লিক করলে ড্রপ ডাউন মেনুতে আপনার সাইটের নাম আসবে (যা প্রপার্টি হিসেবে set করেছেন আগেই) আর সেটাতে ক্লিক করলে পরের ধাপে চলে যাবে-
বামপাশে উপরে লক্ষ্য করুন- সেখানে overview সিলেক্ট করা আছে অটমেটিক্যালি আর ডানপাশে আপনার সাইটের performance, coverage ইত্যাদি দেখানো হচ্ছে। এবার আলাদাভাবে বিস্তারিত দেখতে চাইলে বামপাশের মেনুতে উপরের থেকে ২য় টি সিলেক্ট করুন যা performance হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
শেষ তিনমাসের একটা সম্পূর্ণ সুরতহাল রিপোর্ট দেখা যাচ্ছে যা অন্যান্য এসইও রিপোর্টেও পাবেন। এখান থেকে কতগুলো ক্লিক হয়েছে, সাইটের ইম্প্রেশন কেমন, এভারেজ CTR কত, এবং গড় পজিশন কত, তাও দেখতে পাবেন। উদাহরণস্বরুপ, আমাদের পরীক্ষিত সাইটে ১৩ বার ক্লিক পড়েছে, ৯৭০ ইম্প্রেশন হয়েছে, এবং গড় র্যাংক ১৩.৫ যা মোটামুটি রকম ভালোর দিকে। আমরা যদি আরো বেশি সময়ের ডাটা চাই, তাহলে উপরে তিনমাসের জায়গায় এক বছর বা তারও বেশি সময় সিলেক্ট করতে পারি-
দেখা যাচ্ছে যে, শেষ এক বছরে এই সাইটে ২৬ বার ক্লিক পড়েছে আর ১৩৪০ ইম্প্রেশন হয়েছে। পাশাপাশি গড় র্যাংক ১৬ হয়েছে। এই র্যাংক কিন্তু গুগলের টপলিস্টের url থেকে ১৬ নম্বরে- সেরকম নয়। এটা মূলত আলেক্সা র্যাংকের মত- যত বাড়বে তত সাইটের গ্রহনযোগ্যতা বাড়তে থাকবে। ৮০ এর উপর হয়ে গেলে তা অবশ্যই গুগলের টপ পেজে চলে আসবে আর সেখানে অনেক দিনই থাকবে।
এছাড়াও বামপাশে নিচের দিকে Enhancements এর মধ্যেকার সবগুলোতে ক্লিক করে আপনি সম্পূর্ণ রিপোর্ট পেতে পারেন। সেখানে সাইটের কি কি সমস্যা আছে এবং সাইট্ম্যাপ বা স্নিপেট অথবা মোবাইল ফ্রেন্ডলি কিনা- তা জানতে পারবেন।
সারকথা
এসইও একটি ব্যাপক এবং বিবিধ বিষয় সম্বলিত একটি ব্যাপার। একদিনেই সবকিছু শিখতে পারবেন না বা হবেও না। থাকতে হবে অপরিসীম ধৈর্য আর দ্রুত ধারণক্ষমতা এবং স্ট্র্যাটেজিক মুভমেন্ট। মার্কেটিং সম্পর্কে যাদের ভালো ধারণা আছে বা সেটা নিয়ে লেখাপড়া করেছেন, গবেষণা করছেন, বা অভিজ্ঞতা আছে- এমন কেউই এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজার হতে পারবেন দ্রুততার সাথে। অবশ্য টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকলে কিছুই হবে না। বাজারে হাজারো টুলস পাবেন এবং ফ্রি বা পেইড উভয়ই পেতে পারেন। তবে টুলস ব্যবহার করলে সবসময়ই ব্রান্ড টুলস ব্যবহার করা উচিত। এক্ষেত্রে আমি সাজেস্ট করবো Semrush আর Ahrefs কে। এই দুইটি টুলসই আপনার সাফল্য এনে দিতে পারে কম সময়ে এবং কোনোরকম ঝামেলা ছাড়া। সময় স্বল্পতার কারণে অনেক কিছুই এই ছোট পরিসরে শেয়ার করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। আশা করি, ভবিষ্যতে এসইও নিয়ে আরো মজার মজার টিপস আর ট্রিকস নিয়ে আসবো। ভাল থাকুন আর প্রযুক্তির সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে।
0 Comments