মধ্যযুগে অর্থ্যাৎ ১৩০০-১৬৯৯ এই দীর্ঘ সময়ে বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটে বিশ্বে। এ যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান, টেকনোলজি, ইতিহাস, ভূগোল, রাজনীতি, ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রসার ঘটে। তবে সবকিছুর ওপরে প্রভাব ফেলতে থাকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি- এবং খুবই নৃশংসভাবে। অনেক মনীষী ও বিজ্ঞ মানুষদের এসময় হত্যা করা হয়, গুম করা হয়, অথবা দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। তবুও জ্ঞানচর্চা থেমে থাকেনি আর কতিপয় জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তির হাত ধরে গঢ়ে ওঠে এক গুপ্ত সংঘ।
কিভাবে গঠিত হলো
সন তারিখ নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন কথা বলেন তবে ধারণা করা হয় যে, ১৩০২ সালের দিকে ক্রসেড চলাকালীন একটি সশস্ত্র সেনাদল যারা মনেপ্রাণে আসল ক্রিশ্চান ছিল, তারা তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা ও জানমালের নিশ্চয়তা বিধান করতে পোপের কাছে আবেদন করে। পোপ তাদের আবেদন মেনে নেন ও এই দলটি “নাইট টেম্পলার” নামে স্বীকৃতি পায়। এরাই সর্বপ্রথম আধুনিক ব্যাংকিং সিস্টেমের প্রবর্তক। টেম্পলাররা সাধারণ ক্রিশ্চানদের মতো নিয়ম-কানুন বা রীতি-নীতি ফলো করতো না। কেমন জানি একটা নিজস্ব স্টাইলে তারা প্রার্থনা করতো, নিজেদের শরীরে যন্ত্রণা বয়ে বেঢ়াতো, সিলিস (বা চ্যালিস) বেল্ট নামক সাংঘাতিক এক বেল্ট নিজেদের উরুতে পেচিঁয়ে রাখতো যা হাটাচলার সময়ে উরুতে গেথে যেত-রক্ত ঝরাতো। তারা বলতো, যীশু অনেক কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন তাই আমরাও সেটা ফলো করি।
তীর্থযাত্রীরা অনেক সময়ই বেশ টাকাপয়সা নিয়ে মরুভূমি পাড়ি দিতো বা এনিমি টেরিটোরি দিয়ে পার হতো। লোকাল ডাকাত তো ছিলই এবং সেই সাথে জিহাদীদের আক্রমণের আশংকাও ছিল। টেম্পলাররা চিন্তা করলো বেশ কিছু স্পটে বা শহরে তাদের শাখা খুলবে আর তীর্থযাত্রীরা তাদের টাকাপয়সা জমা রাখতে পারবে। পরবর্তী টেম্পলার স্পটে গিয়ে টোকেন দেখিয়ে আবার সেই টাকা তুলে নিতে পারবে। টেম্পলাররা সীমিত লাভ রাখতো আর তাতে তীর্থযাত্রীদের কোনো আপত্তিও ছিল না।
একটা সময়ে, ২০-৩০ বছরের মধ্যে টেম্পলাররা বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য গোষ্ঠিতে পরিণত হলো। ফলাফল- পোপ বা ভ্যাটিকান এদের পেছনে তদন্ত করা শুরু করলো। ইর্ষা বা আক্রোশের ফলে পোপ এই টেম্পলার গোষ্ঠিকে প্যাগান বা ইনফিডেল বা নাস্তিক উপাধী দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে হত্যা করতে শুরু করলেন। কাউকে আগুনে পুড়িয়ে, কাউকে গরম তেলে ডুবিয়ে, কাউকে ফাসি দিয়ে। এছাড়া গিলোটিন তো ছিলই। টেম্পলাররা ছোট ছোট দলে দেশ ছাড়তে লাগে বা কেউ কেউ লুকিয়ে থাকে ছদ্মবেশ ধরে।
টেম্পলাররা নিজেদের মধ্যে থেকে একজন নেতা নির্বাচিত করে যাকে গ্রান্ডমাস্টার নামে ডাকা হতো। প্রত্যেক গ্রান্ডমাস্টার আবার নিজের পছন্দ অনুযায়ী ১০-১২ জনের একটা কমিটি গঠন করতেন। তাদের কাজ ছিল জমানো টাকাপয়সা, সোনা, হীরা, তামা, লোহা, ও অন্যান্য সম্পত্তিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা। গোপন কিছু বিষয়ও ছিল বা ডকুমেন্টস ছিল যা টেম্পলাররা যুগ যুগ ধরে রক্ষা করতো-পারিবারিবভাবে। টেম্পলাররা নিজেদের নাম পরিবর্তন করা শুরু করে আর ছোট ছোট দল গড়ে তোলে যেমন- প্রায়োরি অব সাইওন, ফ্রিমেসন, ক্ল ক্লক্স ক্লন (কেকেকে), ইত্যাদি। আর যারা বিজ্ঞানচর্চা বা গবেষণাধর্মী কাজগুলো সামলাতো, তারা গড়ে তোলে ইলুমিনাতি। ইংরেজি শব্দ ইলুমিনেশন এই ইলুমিনাতি থেকেই এসেছে। এর মানে হলো আলোকবর্তিকা বা আলোকিত করা।
আদি সদস্যরা
ইলুমিনাতি গোষ্ঠী বিশ্বের সেরা সেরা ব্যাক্তিগুলোকে নিজেদের দলে টেনে নেয়- অর্থ দিয়ে বা সম্মানিত করে। এই গোষ্ঠীর সেরা কিছু সদস্য হলেন- স্যার আইজাক নিউটন, উইলিয়াম শেক্সপিয়র, দান্তে, লিওনার্ডো ডা ভিঞ্চি, মাইকেল এঞ্জেলো, গে লুসাক, আলেকজান্ডার পোপ, রবার্ট ব্রাউন, এবং গ্যালিলিও। অর্থ্যাৎ, পোপ নিয়ন্ত্রিত ভ্যাটিকানের গন্ডি পেরিয়েও ডা ভিঞ্চি ও গ্যালিলিওর মতো ধর্মপ্রাণ ক্রিশ্চান এই দলের সদস্য ছিলেন এবং গ্রান্ডমাস্টারও হয়েছেন।
ওদিকে ভ্যাটিকান মনে করতো এরা নাস্তিক ও ইশ্বরের প্রতি অবিশ্বাসী। তারা গ্যালেলিওকে হত্যা করে। ডা ভিঞ্চিকে হুমকি দেয় আর শেক্সপিয়রের ব্যক্তিগত জীবন ছন্নছাড়া করে রাখে। এক সময়ের ক্রসেডাররা এখন হয়ে পড়ে ধর্মত্যাগী। ক্যাথলিকরা আজও টেম্পলার আর ইলুমিনাতিদের নাস্তিক বা এথিস্ট মনে করে।
ইলুমিনাতিরা এতটাই শক্তিধর হয়ে পড়ে এক পর্যায়ে যে তারা আমেরিকাকে নিজেদের আওতায় নিয়ে আসে। সেখানের রাজনীতি পুরোটাই ইলুমিনাতি গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করতো। এমনকি আমেরিকার সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ইলুমিনাতি গোষ্ঠীর ছায়া সদস্য ছিলেন। এছাড়াও সরাসরি গ্রান্ডমাস্টারের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতেন রুজভেল্ট, উড্রো উইলসন আর জর্জ বুশ। কথিত আছে, বিল ক্লিনটনও ফ্রিমেসন গোষ্ঠীর সাথে জড়িত ছিলেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপট
ইলুমিনাতিরা পৃথিবীর সব দেশেই আছে। সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয়, যেভাবেই থাকুক না কেন, তারা যথেষ্ট ক্ষমতাধর। আধুনিক ব্যাংকিং সিস্টেমের প্রবর্তনের জন্য তারা অর্থনীতিবিদদেরই বেশি দলে নিয়ে থাকে। এছাড়াও বিজ্ঞানী, গবেষক, রাজনীতিবিদ, আমলা, স্বৈরশাসক, টেকনোলজিস্ট এবং দার্শনিকদের এই দলে টানা হয়। তবে অবশ্যই জোর-জবরদস্তি ছাড়া। কাউকেই এখানে জোর করে কিছু করানো হয় না। সবাই তাদের নিজ নিজ ধর্মমত প্রচারও করতে পারবে বা মেনে চলতে পারবে।
১৮৯৭ সালে ইসরাইলভিত্তিক জায়োনিস্ট গোষ্ঠী, ইলুমিনাতিদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে আর তাদের দলে সংযুক্ত হয়। বর্তমানে ইলুমিনাতি সদর দপ্তর জার্মানীর বাভারিয়ার এক নির্জন গ্রামের টেম্পলার চার্চে অবস্থিত। তবে প্রতি বছরেই এই সদর দপ্তর পাল্টানো হয়। কখনো অস্ট্রিয়ায় বা কখনো জেরুজালেমে। আবার কখনো ফার ইস্টে যেমন- কম্বোডিয়া, লাওস বা ভিয়েতনামে।
উপসংহার
ইলুমিনাতি গোষ্ঠীকে অনেকেই কমুনিস্ট বা প্যাগান বা শয়তানের পূজারী হিসেবে দেখলেও আদপেই তারা তা নয়। প্রধানত: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চাই এদের মূল লক্ষ্য। বিভিন্ন নামকরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার আর বায়োকেমিস্ট আছে ইলুমিনাতি গোষ্ঠীতে। তারা নিয়মিত গবেষণা করে চলেছেন বিশ্বের ভয়ানক, মারণ ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে। প্রযুক্তির আগ্রাসন তো আছেই- নিত্যনতুন প্রযুক্তি আনা হচ্ছে প্রতি মিনিটে। অদূর ভবিষ্যতে ইলুমিনাতি জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় অকল্পনীয় অবদান রাখতে পারে। সে লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে লক্ষাধিক সদস্যের এই গোষ্ঠীটি।
6 Comments
wow..informative
ReplyDeleteyup..these groups shuffle their spots as well as grandmasters. however, please write about their rituals in the next article.
ReplyDeletegreat job miss. keep it up.
ReplyDeletei don't understand this language but after seeing the illuminati sign, I became interested and translated this. Very informative and real aspects have been described here. keep it up!
ReplyDeletenice article cutie. hope we'll see more vivid description on this topic.
ReplyDeleteinformative and extraordinary article for secret societies
ReplyDelete